ইকরামুল হোসেন, মনিরামপুর (যশোর): মাছে-ভাতে বাঙালি এই প্রবাদবাক্যে নদীমাতৃক এই বাংলার মানুষকে এক কথায় চিহ্নিত করা হয়। কালের বিবর্তনে সেই অবস্থা এখন আর না থাকলেও বাংলার নদী-নালা, খাল-বিলে মাছের কমতি নেই। তেমনি মৎস্য শিকারেরও রয়েছে হাজার বছরের আবহমান বাংলার বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐতিহ্য।
বাংলার একেক অঞ্চলের এমনকি খাল-বিলে রয়েছে মৎস্য শিকারের বিচিত্র ধরন। দিনের বেলা মাছ মারার এক রকম কৌশল, রাতের বেলা আবার আরেক রকম। অন্যান্য অঞ্চলের মতো যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের মাছ শিকারিরা ব্যাস্ত সময় পার করছে। সন্ধা নেমে আসলেই মাঠ জুড়ে চোঁখে পড়ে মাছ শিকারীদের ভীড়।
গ্রাম্য ভাষায় একে বলা হয় (আলোবাওয়া বা আলোকাটা) প্রযুক্তির কল্যাণে এখন কেরোসিন বাতির জায়গা নিয়েছে বিদ্যুৎচালিত টর্চলাইট। টর্চলাইটের আলো ব্যবহার করে রাতের আঁধারে কোচ বা চাঁবি দিয়ে মাছ ধরার এ কৌশল আলোকাটা নামেও পরিচিত। যেন আলো বেয়ে বেয়ে খাল-বিলের জলে ফেলা আলো ধরে ধরে মাছ শিকারের জন্য নামে শিকারীরা।
মানুষের দৈনন্দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া যেমন লেগেছে তেমনি মাছ ধরার কৌশলের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এ ধরনের আলোকাটায় মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। রাতের অন্ধকারে সারি বেঁধে ছেলে-বুড়োরা আলো নিয়ে মাঠে নামে। দূর থেকে এ দৃশ্য বড়ই মনোরম।
যেন বাতির পরে বাতি খাল-বিলের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর মাছের আভাস পেলেই ঝপাত করে কোপ। আলোর সাহায্য যখন মাছ ধরা হয় তখন দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন খালবিলে জোনাকি পোকা আনাগোনা করছে। আষাঢ়-শ্রাবণ বৃষ্টির পানি যখন জমিতে নদী-নালাতে বাড়তে শুরু করে তখন এই আলোবেয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়েন মাছ শিকারিরা।
এ সম্পর্কে শ্যামকুড় গ্রামের শিমুল হোসেন বলেন, হাঁটু পানি বা তার চেয়ে কম পানিতে মাছ ধরা অনেক সুবিধা। এমন পানিতে বিশেষ করে মাঝারি বা বড় মাছ ধরা পড়ে বেশি। এক হাতে টর্চলাইট, কোমরে বাঁধা ঝোলা ব্যাগ বা ডুলা। অন্য হাতে চাঁবি বা কোঁচ মাছধরার সরঞ্জামাদির এ ধরনের বাহারি নাম আছে। ডুলা হলো- বাঁশের তৈরি এক ধরনের ঝুলন্ত পাত্র, যাতে মাছ ধরে ধরে রাখা যায়। অধিক বর্ষণের কারণে বিভিন্ন বিল, নালা ও ডোবা থেকে প্রাকৃতিক মাছ বেরিয়ে আসে জমিতে বা হাওরে। যারা শৌখিন মাছ শিকারি বা মাছ ধরার নেশা যাদের বেশি তারাই এভাবে মাছ শিকারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
একই গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, আমার মাছ বিক্রি করে সংসার চলে রাতে আলোর সাহায্য মাছ ধরতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। এই বর্ষার সময় প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে যাই আবার রাত ১ টা ২ টার দিকে ফিরে আসি। প্রায় ৫-৬কেজি মাছ ধরতে পারি। মাঝে মধ্যে এর বেশিও হয়, আবার কমও হয়। আমি আমার বন্ধুসহ রাতে বেরিয়ে পড়ি। কয়েক ঘন্টা আলোর সাহায্যে প্রত্যেকে ৪-৫ কেজি মাছ ধরতে পারি। বিশেষ করে মাগুর, শিং, কৈ, টাকি, শৌল, টেংরা, বোয়াল, বাইম প্রভৃতি দেশীয় মাছগুলো ধরা পড়ে বলেন তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।